odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Monday, 15th December 2025, ১৫th December ২০২৫

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ‘উটপাখির মতো বালিতে মুখ গুঁজে’ রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে: টিআইবি

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৪ June ২০২৪ ১১:৪৫

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ June ২০২৪ ১১:৪৫

সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিকে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি সংবিধান পরিপন্থী হুমকি বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে টিআইবি বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের সাবেক কয়েক শীর্ষ কর্মকর্তার বিপুল অর্থসম্পদের তথ্য ফাঁস হয়েছে। পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি সম্পদের তথ্য প্রকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীর একাংশের দুর্নীতির সুরক্ষা প্রদানের অপচেষ্টা। টিআইবির এক বিজ্ঞপ্তিতে রোববার এসব কথা বলা হয়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্যের ভিত্তিতে টিআইবি বলেছে, পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতির পর পুলিশকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম যেন সতর্কতা অবলম্বন করে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিষয়টিকে শুধু দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতাই নয়, পুরো জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অশনিসংকেত হিসেবে মনে করে টিআইবি।

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া) ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুলিশের সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আংশিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ঢালাও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে। সংগঠনটি এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। পাশাপাশি ভবিষ্যতে পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে কোনো ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন ও সাংবাদিকতার নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণের অনুরোধ জানানো হয়।

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিটিই ‘পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে উল্লেখ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠনের এমন বিবৃতি যে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সুরক্ষা প্রদানের একটি সুপরিকল্পিত প্রক্রিয়া—এমন মনে হওয়া মোটেও অমূলক নয়। এ বিবৃতি নাগরিকের তথ্য জানার অধিকার নিশ্চিতের অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বাস্তবতাকে অস্বীকার করে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ‘উটপাখির মতো বালিতে মুখ গুঁজে’ রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্নীতির খবরে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে—পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এমন বক্তব্যকে ‘বালখিল্যতার শামিল’ হিসেবে উল্লেখ করে টিআইবি বলেছে, পুলিশের সাবেক শীর্ষ কর্তাদের দুর্নীতির যে বিশাল, অস্বাভাবিক ও অনেকাংশে উৎকট খতিয়ান গণমাধ্যমের কল্যাণে জানা যাচ্ছে, সেসব সংবাদকে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার খোঁড়া যুক্তিতে থামানোর চেষ্টা করা পুলিশের মতো একটি দায়িত্বশীল সংস্থার ভাবমূর্তি সুরক্ষায় নিজেদের সক্ষমতা ও সৎ সাহস নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দেয়।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘স্বাধীনতাযুদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগ্রাম, দুর্যোগ কিংবা সংকটে পুলিশের অবদানকে আমরা শুধু স্বীকারই করি না, প্রশংসার সঙ্গে স্মরণেও রাখি। কিন্তু এই অবদানকে অপরাধের সুরক্ষার লাইসেন্স (সনদ) হিসেবে ব্যবহার বা অপরাধীর জন্য বিচারহীনতার সুযোগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার দুরভিসন্ধি পুলিশের নৈতিকতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।’ দুষ্ট যুক্তির বদলে স্বপ্রণোদিত হয়ে পুলিশের তরফ থেকে নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত তদন্তে সহায়তার ঘোষণা দিলে তা বাহিনীটির দুর্নীতি প্রতিরোধের সদিচ্ছার দৃষ্টান্ত স্থাপন করত বলে উল্লেখ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, এটা একদিকে যেমন পুলিশের ভাবমূর্তির জন্য সহায়ক হতো, অন্যদিকে পুলিশের প্রত্যাশিত পেশাগত মর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতো।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীতে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে তথ্য প্রকাশ নিশ্চিতের পরিবেশ সৃষ্টি করার কথা যে মন্ত্রণালয়ের, সেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেই তথ্য গোপনের মাধ্যমে দুর্নীতিকে সুরক্ষা প্রদানে উদ্যোগী হতে দেখা যাচ্ছে। সরকারের জন্য এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে!’



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: