
ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ্'র হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে সংহতি প্রকাশ করে মানববন্ধন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান।
সোমবার (৪ আগস্ট) বেলা ১১টায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের উদ্যোগে বটতলা প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসন ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয় তারা।
এ কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল রাজনৈতিক ছাত্র-সংগঠনগুলো একাত্মতা পোষণ করে অংশগ্রহণ করেন।
এসময় আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান জামিল আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে করে বলেন, "সাজিদ হত্যার বিচারের আন্দোলনের একমাত্র প্লাটফর্ম আল-কুরআন বিভাগের নেতৃত্বে আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করুন। অন্য কোনো প্লাটফর্মের সাথে আন্দোলনে গিয়ে লাশের রাজনীতিতে জড়াবেন না।"
সাজিদের বন্ধু ইনসান বলেন, "সাজিদ আমার খুব কাছের একজন বন্ধু ছিল। প্রশাসন শুরু থেকেই এ বিষয় নিয়ে গড়িমসি করছে। প্রশাসনকে আমরা যখন মামলা করতে বললাম, তারা বললো এটা হত্যাকাণ্ড কিনা নিশ্চিত না। কিন্তু এখন নিশ্চিত। তাই আপনারা নিজে বাদী হয়ে মামলা করুন। যেহেতু সে এই ক্যাম্পাসে খুন হয়েছে, তাই তার দায়ভার এই প্রশাসনেরও। তাই আপনারা সুষ্ঠু তদন্তের ব্যবস্থা করুন। যদি আপনারা গড়িমসি করেন, তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবো না।"
ইবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মু. মাহমুদুল হাসান বলেন, "আজকে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের পর আমাদের একটি নিরাপদ প্রশাসন পাওয়ার কথা ছিল। এমন একটি প্রশাসন পাওয়ার কথা ছিল যে প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। কিন্তু আমরা আমাদের ভাইয়ের লাশ পেলাম।
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, সাজিদের খুনীকে খুজে বের করতে হবে। যদি না পারেন তাহলে আমরা প্রশাসনকে আসসালামু আলাইকুম বলতে বাধ্য হবে। আমাদের সকল দাবি আপনাদের পূরণ করতেই হবে। সাজিদের খুনের বিচার করতেই হবে হবে। যদি সাজিদের খুনীদের বের করতে না পারেন, তাহলে গদি ছেড়ে দিন। তাই আপনারা দ্রুত আসুন, শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলুন। শিক্ষার্থীরা কি আপনাদের রাখবে নাকি চলে যেতে বাধ্য করবে সে ব্যাপারে কথা বলুন। দাবি একটাই সাজিদের হত্যাকারীদের বিচার চাই।"
ইবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, "আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি সাজিদ আব্দুল্লাহর হত্যার বিচারের দাবিতে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে একটি ধন্যবাদ দিতে হয় কারণ দেরিতে হলেও তাদের একটু শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে যে, তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, উচ্চতর তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনে পিবিআইয়ের মাধ্যমে সাজিদের খুনীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। ততক্ষণ আমরা হাতে চুড়ি পড়ে বসে থাকবো না। আমরা প্রশাসন এখানে এসে কথা বলবে। তা না হলে আমরা এখান থেকে উঠবো না।"
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, "আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে যেন কেউ এই আন্দোলনকে অন্য কোনো দিকে ঘুরিয়ে দিতে না পারে৷ আমরা চাই এই তদন্ত পিবিআইকে হস্তান্তর করা হোক। কতদিনের মধ্যে হত্যাকারীদের ধরা হবে তা জানাতে হবে। পিবিআইকে সময়ে সময়ে আমাদেরকে তদন্তের আপডেট দিতে হবে। সাজিদ একজন জুলাই যোদ্ধা ছিল। প্রতিটি জুলাই যোদ্ধার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।"
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন,"খুনিদের অবশ্যই বিচার হবে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যা যা সহযোগিতা করা দরকার প্রশাসন সবই করবে। আজকের মধ্যে মামলা করা হবে। যেহেতু আগেই জিডি এন্ট্রি করা হয়েছিল সেহেতু মামলা ফরমাল ওয়েতে হবে। আজকে ৭ টায় সিন্ডিকেট মিটিং ডেকেছি। আমি তোমাদের নিশ্চিত করছি যে মিটিংয়ে তোমাদের দাবি অনুসারে সিদ্ধান্ত হবে এবং কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তোমরা ক্লাস পরীক্ষা সহ একাডেমিক সকল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করো।"
উল্লেখ্য যে, গত রবিবার (৩ আগষ্ট) প্রকাশিত সাজিদের ফরেনসিক রিপোর্ট সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যুর কারণ শ্বাসরোধজনিত শ্বাসকষ্ট যা মৃত্যুর আগে ঘটেছে এবং এটি হত্যাজনিত। ময়নাতদন্ত করার সময় থেকে আনুমানিক ৩০ ঘণ্টা আগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। একইদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ বিষয়ে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস কমিটি উচ্চতর তদন্তের সুপারিশ করে। এদিকে রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর রাত ৮ টার দিকে শিক্ষার্থীরা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে।
মো. সামিউল ইসলাম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: