বিশেষ প্রতিনিধি, অধিকার পত্র ডটকম
ঢাকা: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাম্প্রতিক শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। শুনানির সময় তিনি আসামিপক্ষের আইনজীবী নাজনীন নাহারকে উদ্দেশ্য করে বলেন—
“আপনি চুপ থাকুন, কথা বলবেন না… আপনাকেও আসামি করা হতে পারে।”
মন্তব্যটি প্রকাশ্যে আসার পর ফেসবুক ও টুইটারে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই মন্তব্যটিকে অগ্রহণযোগ্য ও হুমকিস্বরূপ বলে উল্লেখ করছেন।
ঘটনার বিবরণ
রোববার, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মেজর জেনারেল (অবঃ) জিয়াউল আহসানের চারটি আবেদনের শুনানি চলছিল।
আইনজীবী নাজনীন নাহার অভিযোগ করেন—
- মি. আহসানকে সেফ হাউজে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাকে যথাযথভাবে জানানো হয়নি
- জিজ্ঞাসাবাদ আইন ও নিয়ম অনুযায়ী করা হয়নি
- গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের একজন সদস্য অবৈধভাবে জিজ্ঞাসাবাদে অংশ নিয়েছেন
- জিজ্ঞাসাবাদের সময় মি. আহসানকে ভয় দেখানো হয়—“আপনার মেয়ে এতিম হয়ে যাবে”
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে চিফ প্রসিকিউটর উত্তেজিত হয়ে উক্ত মন্তব্য করেন।
ট্রাইব্যুনালের প্রতিক্রিয়া
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার বলেন—
“এটি আদালত। আপনি একজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলছেন।”
অর্থাৎ চিফ প্রসিকিউটরের আচরণ আদালত স্বীকৃত নয়।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মন্তব্য
ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান লিখেছেন—
- এই ধরনের হুমকি আদালতে গ্রহণযোগ্য নয়
- এটি ২০১৩ সালে জামায়াত আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাককে হুমকি দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে তুলনীয়
- চিফ প্রসিকিউটরের দাবি যে মি. আহসান এক হাজার হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তার পক্ষে প্রমাণ নেই
বার্গম্যান আরও বলেন, যদি অভিযোগ সত্য হয়, তবে ট্রাইব্যুনালকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও যাচাই করতে হবে।
প্রতিক্রিয়া দিতে অনীহা
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন—
“কোর্ট রুমে যা হয়েছে, তা নিয়ে আমি বাইরে কোনো মন্তব্য করব না।”
আইনজীবী নাজনীন নাহারও বলেন—
“কোর্টে যা হয়েছে, তা নিয়ে মন্তব্য করলে আদালতকে অসম্মান করা হবে।”
বিচার বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক জানান—
- আদালতে এমন ঘটনা কাম্য নয়
- তবে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় মাঝে মাঝে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ঘটে
- এ ধরনের ঘটনা সাধারণত বিচার কার্যক্রমে কোনো প্রভাব ফেলে না
বিবিসি বাংলা

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: