বিশেষ প্রতিনিধি, অধিকার পত্র ডটকম
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর একগুঁয়েমি এবং জনগণের ভোটের প্রতি সম্মান না দেখানোর কারণেই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ওপর দীর্ঘদিনের বৈষম্য ও অবিচার জনগণকে বিদ্রোহে ঠেলে দেয়।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াত আয়োজিত যুব ম্যারাথনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ১৯৬৯–এর গণ–আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নির্বাচনে বিজয়ী দল ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী জনগণের রায় অস্বীকার করে। “সেদিন ভোটের প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক এক কাতারে শামিল হয়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জনগণ যাঁদের নির্বাচিত করেছিল, তাঁরা বৈষম্যমুক্ত সমাজ, ন্যায়বিচার ও মর্যাদাশীল রাষ্ট্র গঠনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর সেই অঙ্গীকার রক্ষা করা হয়নি। “জাতিকে উপেক্ষা করে একটি পরিবার, গোষ্ঠী ও দলকে দেশের মালিক বানানো হয়েছিল, আর সাধারণ মানুষকে দাসত্বে আবদ্ধ করা হয়,” বলেন জামায়াত আমির।
আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “সোনার বাংলা গড়ার ওয়াদা দিয়ে দেশকে শ্মশান বাংলায় পরিণত করা হয়েছিল। মাত্র পৌনে চার বছরের দুঃশাসন মানুষকে আতঙ্কিত করেছিল।” তিনি আরও বলেন, ১৫ আগস্টের ঘটনার দায়ও আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে, জাতিকে নয়।
পালিয়েও মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না’
জামায়াত আমির অভিযোগ করেন, পঁচাত্তরের ঘটনার পরও আওয়ামী লীগ শিক্ষা নেয়নি। তাঁর ভাষায়, “খুন, গুম, আয়নাঘরের রাজনীতি চালু করে শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। কিন্তু পালিয়েও তারা মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না।”
তিনি সর্বশেষ ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদির ওপর প্রকাশ্য গুলির ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, “ঢাকার রাজপথে গুলি করে একজন তরুণ নেতার জীবন শেষ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।”
‘বস্তা পচা রাজনীতি ছুড়ে ফেলে দিতে হবে’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “অতীতের বস্তা পচা রাজনীতিকে পায়ের তলে ফেলে দিতে হবে। এই রাজনীতি বাংলাদেশে আর চলবে না। নতুন রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, ষড়যন্ত্র, কালোটাকা ও ভোট কেনার চেষ্টা জনগণ আর মেনে নেবে না।
তিনি জানান, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন ইতিহাসের সূচনা করবে।
⚖️ নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক বার্তা
নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে জামায়াত আমির বলেন, তারা কোনো ধরনের আনুকূল্য চায় না। তবে নির্বাচন পরিচালনায় সামান্য পক্ষপাতিত্বও সহ্য করা হবে না। “রাষ্ট্রের অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে,” বলেন তিনি।
ম্যারাথন অনুষ্ঠানে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম ও মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিনসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ম্যারাথনটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে গিয়ে শেষ হয়।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: