নিউজ ডেস্ক | অধিকারপত্র
ইউক্রেন সংকটের প্রায় চার বছর পর এক ম্যারাথন সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বকে নতুন বার্তা দিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, পশ্চিমারা যদি রাশিয়ার স্বার্থকে সম্মান করে এবং রাশিয়ার সাথে মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করে তবে ভবিষ্যতে আর কোনো নতুন বিশেষ সামরিক অভিযান বা যুদ্ধের প্রয়োজন হবে না। একই সঙ্গে ইউরোপীয় দেশগুলোতে রাশিয়ার হামলার পরিকল্পনাকে ননসেন্স বা অর্থহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। মস্কোয় আয়োজিত প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার দীর্ঘ ডিরেক্ট লাইন অনুষ্ঠানে বিবিসি-র প্রতিনিধি স্টিভ রোজেনবার্গের এক প্রশ্নের জবাবে পুতিন এই মন্তব্য করেন।
সম্মান দিলে যুদ্ধ নেই:
পুতিন বলেন, যদি আপনারা আমাদের সম্মান করেন, আমাদের স্বার্থের মর্যাদা দেন যেভাবে আমরা সবসময় আপনাদের স্বার্থকে সম্মান করার চেষ্টা করেছি—তবে আর কোনো সামরিক অভিযানের প্রয়োজন পড়বে না। তিনি আরও যোগ করেন যে, রাশিয়া যুদ্ধ চায় না, তবে ন্যাটোর পূর্বমুখী প্রসারের মতো প্রতারণা আর সহ্য করা হবে না।
ইউক্রেন যুদ্ধ ও শান্তি প্রস্তাব:
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে পুতিন জানান যে তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত, তবে তা হতে হবে রাশিয়ার শর্ত মেনে। তাঁর প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে: ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল (দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া) থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহার। কিয়েভকে ন্যাটোতে যোগদানের প্রচেষ্টা ত্যাগ করতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইউক্রেনে নতুন নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচনের সময় রাশিয়া বোমা বর্ষণ বন্ধ রাখার প্রস্তাবও দিয়েছে।
ট্রাম্পের উদ্যোগ ও অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি:
শান্তি প্রতিষ্ঠায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে আন্তরিক বলে প্রশংসা করেন পুতিন। তবে তিনি অভিযোগ করেন যে, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় দেশগুলোই বর্তমানে শান্তি চুক্তির পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনুষ্ঠান চলাকালীন রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির দুরাবস্থা নিয়ে জনসাধারণের কিছু সরাসরি অভিযোগ স্ক্রিনে ভেসে ওঠে। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং ১ জানুয়ারি থেকে ভ্যাট ২০% থেকে বাড়িয়ে ২২% করার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ রুশ নাগরিকরা। তবে পুতিন দাবি করেন, রাশিয়ার অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার ১৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।
শেষ কথা:
ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যখন আগামী কয়েক বছরের মধ্যে রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলার সতর্কবার্তা দিচ্ছে, তখন পুতিনের এই সম্মানের শর্ত নতুন করে ভূ-রাজনীতিতে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আলোচনার বল এখন পশ্চিমাদের কোর্টে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
--মো: সাইদুর রহমান (বাবু), বিশেষ প্রতিনিধি. অধিকারপত্র

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: