07/21/2025 সাজিদ মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ
odhikarpatra
২০ জুলাই ২০২৫ ১২:২৩
ইবি প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভে সমাবেশ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (১৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে সমবেত হতে থাকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। সাজিদের মৃত্যুর দুর্ঘটনা পরিকল্পিত নাকি হত্যাকাণ্ড সেই বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। মৃত্যুকে রহস্যজনক আখ্যা দিয়ে এর পেছনে প্রশাসনের দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগ তোলেন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের "তুমি কে আমি কে,সাজিদ সাজিদ", "আমার ভাইয়ের রক্ত,বৃথা যেতে দেব না", "আমার ভাই কবরে, খুনী কেন বাহিরে", "বাজেট-বাজেট বাজেট নাই, বাজেট কী তোর বাপে খায়?", "প্রশাসনের ব্যর্থতায়,আমার ভাই প্রাণ হারায় " ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আমরা লাশ দেখে প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। আমাদের জানানোর প্রায় পৌনে ১ ঘণ্টা পর সেই লাশ উদ্ধার করা হয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে থানা হওয়ার পরেও পুলিশ আসতে এতো সময় নেওয়ার কারণ কী? এছাড়া লাশ উঠানোর প্রায় আধা ঘণ্টা পার হলেও সেখানে কোন ডাক্তার বা অ্যাম্বুলেন্স আসেনি। পরে আমরা বাধ্য হয়ে ভ্যানে করে তাকে ক্যাম্পাসের মেডিকেলে নিয়ে যাই। পরবর্তীতে তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, সাজিদের লাশ শনাক্তের ২ ঘণ্টায় ও প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা কিংবা হল প্রভোস্টের দেখা মেলেনি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা গুলোতে কোনো সিসি ক্যামেরা সচল নেই। এখন আমরা দেখতেও পাচ্ছি না, সে কখন কোথায় গিয়েছে। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন নিরাপত্তার ঘাটতি মোটেও কাম্য নয়। আমরা প্রশাসনকে বার বার বলার পরেও তারা বাজেট ঘাটতির কথা বলে সিসি ক্যামেরা লাগাচ্ছে না। তাদের যদি এতই ঘাটতি থাকে তাহলে আমাদের বলুক প্রয়োজনে আমরা নিজেরা চাঁদা তুলে সিসি ক্যামেরা লাগাবো।
এসময় শিক্ষার্থীরা সাজিদের মৃত্যুর তদন্ত দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ, পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা, আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের এন্ট্রি ও এক্সিট শতভাগ মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা, ক্যাম্পাসের চারপাশে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা, ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট স্থাপন ও সক্রিয় রাখা ও বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ-সহ বিভিন্ন দাবি জানান। দাবির বাস্তবায়ন না হলে তারা কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন।
শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন,ছাত্র ইউনিয়ন-সহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে অংশগ্রহণ করেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. খান মুহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, " সাজিদ আজ চলে গিয়ে আমাদের একটি বার্তা দিয়েছে যে এ ক্যাম্পাসের ব্যবস্থাপনার মধ্যে অনেক ঘাটতি রয়েছে। আমারা আমাদের সন্তানদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। আমি প্রশাসনের কাছে জানতে চাই, আমার ছেলে কেন এভাবে মৃত্যুবরণ করলো? এর সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের সাথে আমরা থাকবো। যে ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে সাজিদের মত ছেলেরা জীবন দেয়, এই জীবন দেয়ার ব্যবস্থা কে ভেঙ্গে দিতে হবে। সুরক্ষিত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।"
এ ছাড়াও সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে গতকাল শুক্রবার রাতে মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে 'টর্চলাইট মিছিল' করে শাখা ছাত্রশিবির। এসময় তারা নিরাপদ ক্যাম্পাস, শতভাগ আবাসিক, পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভির আওতায় আনার জোর দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের আজিজ হল সংলগ্ন পুকুরে এক শিক্ষার্থীর দেহ ভাসতে দেখা যায়। বিষয়টি বুঝতে পেরে ইবি থানার ওসি মেহেদী হাসানকে খবর দিলে তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হসপিটালে নেয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার সুতপা রায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মো. সামিউল ইসলাম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া