12/10/2025 প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার বিষয়ে ১২ নভেম্বরের একটি প্রশাসনিক বৈঠক: অন্যায়ের অন্ধকার ভাঙার স্বপ্ন
odhikarpatra
৩ December ২০২৫ ২৩:৫৯
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের নিচে নভেম্বরের হালকা ঠান্ডা বাতাসে বসে আছেন কয়েকজন তরুণ। কারও হাতে সাদা ছড়ি, কারও হাতে ব্রেইল বই। তাদের চোখে আলো নেই, কিন্তু মনে আগুন জ্বলছে। তাদের স্লোগান ছিঁড়ে যাচ্ছে শহরের কোলাহল— “আমরা রাষ্ট্রের বোঝা নই, আমরা রাষ্ট্রের অদেখা শক্তি!” এই গল্প শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে—যখন রাষ্ট্র ঘোষণা করেছিল, ব্রেইল জানলেও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটরা 'রিসোর্স টিচার' পদের জন্য অযোগ্য। ১৭ বছর ধরে ব্রেইলে পড়া মানুষদের বলা হলো, তারা ব্রেইল শেখাতে পারবে না! সেই এক ঘোষণাই বদলে দিয়েছিল শত শত তরুণের জীবন, আর শুরু হয়েছিল এক নীরব বিপ্লবের পথচলা।
ঢাকা, ১২ নভেম্বর ২০২৫।
স্থান—সমাজসেবা অধিদপ্তরের সভাকক্ষ।
সময় দুপুর সাড়ে তিনটা।
বাইরে তখন নভেম্বরের রোদ, রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এখনো চলছে প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটদের অবস্থান ধর্মঘটের ২৫তম দিন। কেউ ব্রেইল বইয়ে আঙুল বুলিয়ে দিচ্ছে, কেউ কণ্ঠে মৃদু স্লোগান দিচ্ছে—“দৃষ্টি নেই চোখে, তবু দেখি ন্যায়ের দুনিয়া।” আর ভেতরে চলছে এক বৈঠক, যেখানে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ মানবিকতার পরীক্ষা দিচ্ছে—এক পাশে তরুণ প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটরা, অন্য পাশে রাষ্ট্রের আমলারা ও নীতিনির্ধারকরা। বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার আন্দোলন আজ ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। তবে অধিকার প্রতিষ্ঠা এখনো অসম্পূর্ণ। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ নভেম্বরে মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভাটি একটি মাইলফলক। প্রতিবন্ধী মানুষদের কথা শুধুমাত্র নীতি বা আইনে নয়— সমাজের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়াটাই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন।
উচ্চশিক্ষার পরও অন্ধকার—চাকরির দরজায় এতো বাধা কেনো?
কেনো শুধুই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাথেই এরকম হবে?- এরকম অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায় না বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী। কিন্তু এ যুগের প্রতিবন্ধী তরুণ-তরুণীরা ২০১৮ সাল থেকে ন্যায্য নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। যে বয়সে তাঁদের কর্মজীবনে প্রবেশ করার কথা, সেই বয়সেই তাঁরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন—নিয়ম, নিয়োগ, নীতিমালা, মামলা আর আন্দোলনে। কেন? যার উত্তর পাওয়া যেতে পারে নিচে।
রাজপথে নেমে আসা আলো: যখন নিয়মের পথ বন্ধ
দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, হতাশা আর মরিয়া প্রতিবাদের এক করুণ গাথা এটি। বাংলাদেশের সেই সব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটদের গল্প, যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেও সমাজের মূল স্রোতে ঠাঁই পাচ্ছেন না। তাঁদের অধিকারের আন্দোলন মূলত ২০১৮ সাল থেকে শুরু হলেও, আমলাতান্ত্রিক জট আর রাষ্ট্রীয় অবহেলায় সেই আন্দোলন ক্রমশ রাজপথে রূপ নিয়েছে। সমন্বিত অন্ধ শিক্ষা কার্যক্রমে যখন অযৌক্তিক নিয়োগবিধির (২০১৩ সালের বিধিমালা) জেরে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ব্রেইল/রিসোর্স টিচার পদে আবেদন করতে না দিয়ে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়, তখনই আন্দোলনের আগুন তীব্র হয়ে ওঠে। ব্রেইলে ১৭ বছর ধরে যিনি অধ্যয়ন করলেন, তাঁকে বলা হলো: আপনার শিক্ষকতার জন্য বি.এস.এড ডিগ্রি ও দুই বছরের অভিজ্ঞতা লাগবে—যা উচ্চ শিক্ষিত ফ্রেশারদের পক্ষে অর্জন করা কার্যত অসম্ভব। এই বিধি যেন তাদের বাদ দেওয়ার জন্যই বানানো!
অপেক্ষার ভারী নিঃশ্বাস
বছরের পর বছর তারা চেষ্টা করেছে— আবেদন, স্মারকলিপি, বৈঠক। কিন্তু প্রতিবারই উত্তর এসেছে: “নিয়ম আছে, আইন আছে।” জুলাই বিপ্লবের পর রাষ্ট্রের সংস্কারের কথা উঠেছিল, “বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ”-এর স্বপ্ন দেখা হয়েছিল। কিন্তু সেই সংস্কারের তালিকায় জায়গা পেল না প্রতিবন্ধী নাগরিকদের অধিকার। উপেক্ষা, অপেক্ষা আর বঞ্চনার এই দীর্ঘ শৃঙ্খল ভাঙতেই শুরু হয় নতুন অধ্যায়—রাজু স্মৃতি ভাস্কর্যের সামনে তাদের লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট। জুলাই বিপ্লবের মূলমন্ত্র ছিল বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ, হলেও যুগ যুগ ধরে তাদের সাথে চলে আসা বৈষম্যের অবসানের কোনো উদ্যোগ দেখতে না পেয়ে প্রতিবন্ধী গ্রাজুয়েটরা নিজেরা নিজেদের প্রশ্ন করে, ”আইনী বাধ্যবাধকতা, কোর্টের রায় এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি থাকার পরেও আমাদের জন্য 2012 সাল হতে সংরক্ষিত ১% কোটা কখনোই পূরণ করা হয় নি। আসলে আমরা কি এদেশের নাগরিক?”। আরেকজন বলেন, “হাজারো সংস্কারের ভীড়ে আমাদের উন্নয়নের বিষয়টি রয়ে গেল দৃষ্টির আড়াল।” আর এরূপ রাষ্ট্রীয় অবহেলা গ্রাজুয়েট প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে জন্ম দেয় চরম হতাশার, যার ফলস্বরূপ অবহেলা, মনে জন্ম দিল চরম হতাশা। আর এই হতাশার তীব্রতা থেকেই গ্র্যাজুয়েটরা বাধ্য হন রাজপথে নামতে ।
গত ১৯ অক্টোবর ২০২৫ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু স্মৃতি ভাস্কর্যের সামনে শুরু হয় তাদের সার্বক্ষণিক অবস্থান ধর্মঘট। প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিতে গিয়েও তারা শিকার হন পুলিশের নিপীড়নের। তবুও সরকার বা নীতিনির্ধারকদের কানে পৌঁছায়নি সেই আর্তি। অবশেষে, বাধ্য হয়ে ৮ নভেম্বর থেকে তাঁরা শুরু করেন আমরণ অনশন। টানা ৭২ ঘণ্টা পেরোতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে, রাজুতেই দেওয়া হয় স্যালাইন। শহর তখন তাকিয়ে দেখে— অন্ধ চোখে ন্যায়ের দাবি কতটা স্পষ্ট হতে পারে। এই 'ক্রিটিকাল ইমারজেন্সি' পরিবেশেই নড়েচড়ে বসে মন্ত্রণালয়। অনশনের পঞ্চম দিনে, অর্থাৎ ১২ নভেম্বর, সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে বাধ্য হয়। আর এই আলোচনায় ফুটে উঠল একটি হতাশাজনক অবস্থা।
দায়িত্ববপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় এবং নীতিনির্ধারকদের সাথে সভা: একটি ঐতিহাসিক মুহুর্ত
অবশেষে সরকারের দৃষ্টি যায় তাদের দিকে। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত ১২ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে সমাজসেবা অধিদপ্তরে একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভার সভাপতি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। এই ঐতিহাসিক বৈঠকের এক পাশে ছিল তরুণদের আকুতি, অন্য পাশে সরকারের নিয়মতান্ত্রিক গোঁড়ামি। এই সভার ঘটনা বিশ্লেষণ, আমাদেরকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে সহায়তা করবে।
প্রথম দৃশ্য — ১২ নভেম্বর: রাষ্ট্রের টেবিলে ন্যায়ের পরীক্ষা
১২ নভেম্বর ২০২৫, স্থান— সমাজসেবা অধিদপ্তরের সভাকক্ষ। এক পাশে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, সচিব ও একাধিক কর্মকর্তা; অন্য পাশে ব্রেইল-শিক্ষিত তরুণরা। তাদের হাতে ফাইল নয়, হাতে অন্যায়ের ইতিহাস। সমাজসেবা অধিদপ্তরের কনফারেন্স রুমটিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। কক্ষে বসে আছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ, সচিব, মহাপরিচালক, এবং প্রশাসন শাখার একাধিক কর্মকর্তা। অপর পাশে বসে আছেন ‘দৃষ্টি প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদ’-এর সদস্যরা—যাদের চোখে আলো নেই, কিন্তু কণ্ঠে তেজ আর হৃদয়ে আগুন।
আলোচনা শুরু হয় আহ্বায়ক মো. আলী হোসেন-এর বক্তব্য দিয়ে। শান্ত অথচ দৃঢ় কণ্ঠে তিনি বলেন— “আমরা ব্রেইলে পড়েছি, ব্রেইলে লিখেছি, আর এখন আমরা ব্রেইলে স্বপ্ন দেখি। অথচ রাষ্ট্র আমাদের বলে, আমরা অযোগ্য। এই অন্যায় আর কতদিন চলবে, ম্যাডাম?” একটু বিরতি দিয়ে তিনি আবারো আবেগজড়িত কন্ঠে বরতে থাকেন, “আমরা ব্রেইলে পড়েছি, ব্রেইলে লিখেছি, আর ব্রেইলে স্বপ্ন দেখি। অথচ রাষ্ট্র আমাদের বলে— আমরা অযোগ্য! আমরা কি অন্যের চোখ ধার না নিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ লিখতে পারি না, ম্যাডাম?” তার হাতে একটি ফাইল—ভর্তি নথি, প্রমাণ, আইন, আর হতাশার দলিল। তিনি তুলে ধরেন একটি পরিসংখ্যান—“৬৪টি রিসোর্স টিচার পদের মধ্যে ৩০টি পদে এমন শিক্ষক কর্মরত আছেন, যারা ব্রেইল জানেনই না। এর মানে, অন্ধ শিক্ষার্থীরা শিক্ষিত হওয়ার অধিকার থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে।” কক্ষটা তখন নিস্তব্ধ। আরেকজন তরুণী উঠে বলেন— “আমরা কোটায় চাই না, যোগ্যতায় চাই। কিন্তু যোগ্যতার সংজ্ঞাটাই যদি এমন হয়, যা আমাদের বাদ দেওয়ার জন্য বানানো। একজন আমলা কাশির ভান করে চেয়ার সরান, যেন অস্বস্তি ঢাকতে চান।
আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে গ্র্যাজুয়েট পরিষদের পক্ষ থেকেতাদের পাঁচটি যৌক্তিক দাবি উপস্থাপন করা হয়:
যেহেতু গ্রাজুয়েট প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতিটি দাবিই প্রবেশাধিকার, সমতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে মূলধারায় অন্তর্ভুক্তির পথে থাকা বাধাগুলো দূর করার জন্য। সেহেতু, আন্দোলনকারীরা টেবিলে রাখেন তাদের এই পাঁচটি যৌক্তিক দাবি। পাঁচ দফা দাবিতে দৃপ্ত কণ্ঠ-এ তারা অবষ্থান তুলে ধরেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটদের পাঁচ দফা দাবি যেন শুধুই চাওয়া-পাওয়ার হিসাব নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘ অন্যায় ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ন্যায়ের আর্তি। তারা বলছেন—যে শিক্ষক নিজে ব্রেইল পড়তে জানেন না, তিনি কীভাবে অন্ধ শিক্ষার্থীদের শেখাবেন? তাই তাদের প্রথম দাবি, ব্রেইল-অভিজ্ঞ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের যেন রিসোর্স টিচার হিসেবে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত, বছরের পর বছর আন্দোলন, অনশন ও রাজপথের প্রতিটি ধুলোকণায় পড়ে থাকা তাদের আকুতির প্রতিফলন হিসেবে, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে তাদের জন্য বিশেষ নিয়োগের একটি মানবিক উদ্যোগ নেওয়ার দাবি উঠে এসেছে। তৃতীয়ত, তারা চায় বৈষম্যমূলক ২০১৩ সালের নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন হোক—যে বিধি বাস্তবতা বিবর্জিত এবং তাদের দক্ষতাকে অস্বীকার করে। একইসঙ্গে, পরীক্ষার সময় তারা শ্রুতিলেখক বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দাবি করে—কারণ একজন অচেনা ও অনভিজ্ঞ শ্রুতিলেখক মানেই একটি সম্ভাবনার ভরাডুবি। এবং সবশেষে, তারা চায় বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করা হোক—এই দাবি শুধুমাত্র একটি সংখ্যা নয়, এটি তাদের দীর্ঘ আন্দোলন, ক্ষয়িষ্ণু সময় ও বারবার পিছিয়ে পড়ার প্রতিক্রিয়ায় একটি ন্যায্য ক্ষতিপূরণ। এই পাঁচটি দাবি যেন অন্ধ চোখে দেখা একটি নতুন দেশের রূপরেখা—যেখানে শুধু আলো নয়, থাকে অন্তর্ভুক্তির সাহসিকতা।
এভাবে প্রতিটি দাবির সাথে যুক্ত ছিল তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা—একেকটি গল্প, একেকটি জীবনের বেদনা। এক তরুণ বলেন—“আমার বাবা নেই, মা চোখে দেখে না। আমি ঢাকায় এসেছি পড়াশোনা করে চাকরি পাওয়ার আশায়। কিন্তু সরকার বলে—‘তুমি অযোগ্য’। এখন আমি কাকে বলব, আমার অপরাধটা কী?” আরেকজন যোগ করেন— “আমরা যেভাবে ব্রেইলে শেখাই, সেটাই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের একমাত্র আলোর পথ। অযোগ্য শিক্ষক দিয়ে ব্রেইল শেখানো মানে তাদের জীবন অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া।” তারা আরো যুক্তি দেন—“যে শিক্ষক ব্রেইল জানে না, সে কীভাবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে শেখাবে?” উপদেষ্টা মাথা নাড়েন, বলেন—“দাবিগুলো যৌক্তিক।” কিন্তু তারপরই শোনা যায় সেই পুরনো কথা—“প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় দরকার।”
আলোচনার মোড় ঘুরে যায় যখন সচিবের জবাব আসে শুষ্ক গলায়: “২০১৩ সালের নিয়োগবিধি অনুযায়ী বিএসএড ডিগ্রি ও দুই বছরের অভিজ্ঞতা ছাড়া নিয়োগ সম্ভব নয়। আবার মামলা চলমান, তাই সরকার কিছু করতে পারছে না।” কক্ষের বাতাসে যেন এক ভারী দীর্ঘশ্বাস ছড়ায়। এক পাশে আইন, অন্য পাশে জীবনের আর্তি। ১২ নভেম্বরের বৈঠকে আলোচনার টেবিলের ওপর ছিল কাগজে-কলমে তিনটি মূল বিতর্ক, কিন্তু সেই টেবিল যেন আসলে দুই বাংলাদেশের প্রতীক—এক পাশে ন্যায়ের আর্তি, অন্য পাশে প্রশাসনিক যুক্তি।
প্রথমেই উঠে আসে নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রশ্ন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটদের দাবি ছিল সরল অথচ গভীর—“আমরা তো সাত বছর ধরে অপেক্ষা করছি, মানবিক দিক বিবেচনা করে অবিলম্বে নির্বাহী আদেশে নিয়োগ দিন।” তাদের কণ্ঠে ছিল ক্লান্তি, কিন্তু হার মানার সুর ছিল না। তারা যুক্তি দেন, ব্রেইল শিক্ষায় দক্ষতা ও শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা তাদের জীবনের প্রতিদিনের অংশ; এই বাস্তবতা বোঝার জন্য আর কাগজের অনুমতির দরকার নেই। কিন্তু সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ঠান্ডা কণ্ঠে জানান, নিয়োগের পথ এত সরল নয়। তাদের বক্তব্য—নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘ আইনগত ধাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়; বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে। তাই “নির্বাহী আদেশে” সরাসরি নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। যেন একপাশে মানবিক আবেদন, আর অন্যপাশে প্রশাসনিক প্রাচীর দাঁড়িয়ে।
তারপর শুরু হয় শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে টানাপোড়েন। প্রতিবন্ধী প্রার্থীরা বলেন, রিসোর্স টিচারের মূল যোগ্যতা হচ্ছে ব্রেইল পারদর্শিতা—কারণ ব্রেইলই তো তাদের ভাষা, শেখার হাতিয়ার, শেখানোর মাধ্যম। ১৭ বছর ধরে এই অক্ষরে পথচলা মানুষরা যে ব্রেইলে শিক্ষক হতে চায়, সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু কর্মকর্তারা জানান, ২০১৩ সালের নিয়োগবিধি মেনে চলতেই হবে, যেখানে নির্দিষ্ট ডিগ্রি—বি.এস.এড এবং দুই বছরের অভিজ্ঞতার শর্ত রয়েছে। “বিধি সংশোধন ছাড়া কোনো ব্যতিক্রম সম্ভব নয়,” বলেন তারা। কক্ষে এক মুহূর্তের জন্য ভারী হয়ে ওঠে বাতাস; মনে হয় যেন মানবিক বাস্তবতা আর নীতিগত কাঠামো একে অপরকে বুঝতে পারছে না।
শেষে আসে সবচেয়ে জটিল বিষয়—আদালতের মামলা। প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটদের ব্যাখ্যা ছিল সোজা—এই মামলা তাদের প্রতিবাদের হাতিয়ার, বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের পথ। কিন্তু সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উল্টো যুক্তি তোলেন, বলেন এই মামলাগুলোই এখন প্রধান বাধা; আদালতের রায় না আসা পর্যন্ত কোনো নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না। যেন ন্যায়বিচারের জন্য করা মামলাই হয়ে উঠেছে ন্যায়ের পথে আইনি দেয়াল।
বৈঠকের এই তিন অধ্যায় শেষে টেবিলের দুই পাশে বসা মানুষদের মধ্যে পার্থক্যটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে—একদল রাষ্ট্রের নিয়মে বাঁধা, আরেকদল জীবনের বাস্তবতায় পুড়ে গড়া। প্রশাসনিক ফাইলে যেখানেই “প্রক্রিয়া চলমান” লেখা থাকে, সেখানে প্রতিবন্ধী তরুণদের জীবনে লেখা থাকে এক অদৃশ্য বাক্য—“অপেক্ষা চলছে।”
উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ নিজেও দাবিগুলোর যৌক্তিকতা স্বীকার করেন। কিন্তু তারপরেই শোনা যায় সেই পুরনো কথা— “প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় দরকার।” একজন তরুণ প্রতিবন্ধী তখন বলে ওঠে— “আমরা সময় দিয়েছি সাত বছর। আর কত দেব? আমাদের জীবন থেমে গেছে।”
উপদেষ্টা মুরশিদ মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। পাশে থাকা সচিব ধীর কণ্ঠে বলেন,“বিধি আছে, নিয়ম আছে। ২০১৩ সালের নিয়োগবিধি অনুযায়ী বিএসএড ডিগ্রি আর দুই বছরের অভিজ্ঞতা ছাড়া নিয়োগ সম্ভব নয়। আদালতে মামলা চলমান। আমরা আইনত বাঁধা।” আলী হোসেন সঙ্গে সঙ্গে বলেন— “স্যার, ওই বিধিটাই তো বৈষম্যমূলক। আমরা তো বলছি—ওটা সংশোধন করুন। মামলা করেছি ন্যায়বিচারের জন্য, সরকারের বিরুদ্ধে নয়। আর ব্রেইল শেখার ১৭ বছরের অভিজ্ঞতাই কি ‘প্র্যাকটিক্যাল এক্সপেরিয়েন্স’ নয়?” কক্ষের ভেতরে কিছু মুহূর্ত নিস্তব্ধতা। একজন তরুণী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট, যিনি ইংরেজি বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে পাস করেছেন, বলেন— “আমরা কোটায় চাই না, যোগ্যতায় চাই। কিন্তু যোগ্যতার মাপকাঠিটাই যদি এমন হয়, যা আমাদের বাদ দেয়ার জন্য বানানো—তাহলে আমরা কোথায় যাব?” তার কণ্ঠ কেঁপে ওঠে, কিন্তু চোখের কোণে কোনো জল নয়—শুধু গর্ব।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের একজন কর্তাব্যক্তি ব্যাখ্যা দেন—“বিষয়টি আদালতের অধীনে (‘সাব-জুডিস’), তাই সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।” অন্য এক কর্মকর্তা বলেন— “কোটা তো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালে বাতিল করেছে। আমরা এককভাবে কিছু করতে পারি না।” এই যুক্তিতে আন্দোলনকারীদের মুখে তীব্র হাসি ফুটে ওঠে। আহ্বায়ক আলী হোসেন বলেন— “তাহলে ২০১৩ সালের প্রতিবন্ধী অধিকার আইন, জাতিসংঘের সনদ, আর ২০২৪ সালের সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণগুলো কাগজে থাকবে, বাস্তবে নয়? তাহলে আইন কাদের জন্য?” উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ চুপচাপ নোট নিচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর ধীরে বলেন— “আপনাদের দাবিগুলো অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু প্রশাসনিক প্রক্রিয়া আছে। আমরা দ্রুততম সময়ে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে পাঠাবো।” তখন একজন আন্দোলনকারী বলে ওঠে— “ম্যাডাম, আমাদের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। জীবন থেমে যাচ্ছে। আমরা আর কত ‘প্রক্রিয়া’র অপেক্ষা করবো?” কক্ষের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
দীর্ঘ আলোচনার শেষে উপদেষ্টা বলেন, “আপনাদের আন্দোলন যৌক্তিক। সমাজসেবা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিচ্ছি—একটি সারসংক্ষেপ রিপোর্ট তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠান। মামলা নিষ্পত্তির পর শূন্য পদে অস্থায়ী নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে।” একজন প্রতিবন্ধী প্রতিনিধি তৎক্ষণাৎ বলে ওঠেন— “আমরা কি আবারও অপেক্ষা করবো? আমাদের বয়স, আমাদের জীবন তো থেমে থাকবে না, ম্যাডাম।” তিনি এক মুহূর্ত থেমে বলেন, “আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু প্রশাসনিক কাঠামোকে সময় দিতে হবে।” তখন কক্ষে চাপা স্বরে কেউ বলে ওঠে “আমরা সময় দিয়েছি সাত বছর। আর কত দেব?”
দীর্ঘ আলোচনার পর অবশেষে কিছু সিদ্ধান্তে উপনীত হলো সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো। শুরুতে সিদ্ধান্তগুলো একধরনের স্বস্তি এনে দিলেও, গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে এর ভেতর লুকিয়ে থাকা সূক্ষ্ম বৈষম্য ও প্রশাসনিক অনীহার চিত্র ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আলোচনার টেবিলে প্রতিশ্রুতিগুলোর শব্দ ছিল যতটা সুপরিকল্পিত, তার বাস্তবায়নের পথ ততটাই দুরূহ ও প্রশ্নবিদ্ধ।
এই সিদ্ধান্তগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল একটি কঠিন শর্ত—চলমান দুটি রিট মামলা (নং ৭২৯৬/২০১৯ ও ৬৩৬২/২০২০) অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে। এটি নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করার প্রাথমিক শর্ত হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। আন্দোলনকারী পক্ষের কাছে এই শর্ত যেন একপ্রকার দোটানা সৃষ্টি করে। তাদের দীর্ঘদিনের আইনি লড়াই হঠাৎ করেই যেন একটি প্রশাসনিক সুবিধার বিনিময়ে বন্ধ করার আহ্বান জানানো হলো।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। বলা হয়, মামলা প্রত্যাহার করা হলে ৪২টি শূন্যপদে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে, যদিও তা হবে আউটসোর্সিং পদ্ধতির মাধ্যমে। এই পদক্ষেপ, যদিও তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটাতে পারে, দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি করে আন্দোলনকারীদের মধ্যে।
আরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল ২০১৩ সালের বিদ্যমান বিধিমালা সংশোধনের প্রতিশ্রুতি। বর্তমান বিধিমালায় বিদ্যমান বৈষম্যের বিষয়টি স্বীকার করে সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়। সংশোধিত নীতিতে রিসোর্স শিক্ষকের ৬০% পদ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। যদিও এটি নীতিগতভাবে ইতিবাচক এক অঙ্গীকার, বাস্তবে এটি কবে কার্যকর হবে বা আদৌ হবে কি না—তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।
এইভাবেই, একদিকে সভার সিদ্ধান্তগুলো একটি সম্ভাব্য সমাধানের দিক নির্দেশ করে, আবার অন্যদিকে তারা আন্দোলনকারীদের সামনে এক নতুন অনিশ্চয়তার ফাঁদও তৈরি করে দেয়। কথার জালে ঢাকা পড়ে থাকে প্রশাসনিক টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণের কৌশল। তাই প্রশ্ন থেকেই যায়—এই সিদ্ধান্তগুলো কি সত্যিই সমস্যা সমাধানের পথে অগ্রসর হওয়ার ইঙ্গিত দেয়, নাকি কেবল সময় কাটানোর আরেকটি পদ্ধতিগত প্রয়াস?
ডিসকোর্স বিশ্লেষণ: প্রতিশ্রুতির আড়ালে লুকানো বৈষম্য
এই সিদ্ধান্তগুলোই প্রমাণ করে, রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা মানবিকতার চেয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে:
স্পষ্ট প্রতিফলন
উল্লেখিত আন্দোলন ও পরবর্তী নীতিগত স্বীকৃতির প্রেক্ষিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক স্পষ্টভাবে উঠে আসে:
শেষ দৃশ্যের অপেক্ষা: আলো না এলে অন্ধকারেই জ্বলবে দীপ্তি
বৈঠক শেষে তরুণরা ধীরে ধীরে রাজু ভাস্কর্যের পথে ফিরে আসে। কেউ ছড়ি ঠুকে পথ চিনছে, কেউ সঙ্গীর কাঁধে হাত রেখে হাঁটছে। তাদের চোখে আলো নেই, কিন্তু তাদের গলায় আলো ঝলমল করছে— “চোখে আলো নাই, তবু অন্যায়ের অন্ধকার ভাঙব!” রাজু ভাস্কর্য থেকে সাময়িক স্থগিত হওয়া আন্দোলন আসলে কি দীর্ঘ প্রতীক্ষার আর এক নাম? রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা যখন ন্যায্যতা স্বীকার করেও আইনি জটিলতার অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করে, তখন বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন কেবলই দীপ্ত আশা হয়ে থাকে, বাস্তবে রূপ নিতে পারে না। আহ্বায়ক আলী হোসেন রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে দাঁড়িয়ে বলেন: “আজ একটা দরজা খুলেছে, কিন্তু তাতে আলো আসবে কি না— সেটা এখনো জানি না। যদি না আসে, আমরা আবার রাস্তায় নামব। কারণ, এই আলো আমাদেরই অধিকার।” এই আন্দোলন শুধু চাকরির দাবি নয়— এটি বাংলাদেশের শিক্ষা ও মানবাধিকারের বিবর্তনের এক নতুন অধ্যায়। সহানুভূতি নয়, তারা চান সম্মান। করুণা নয়, তারা চান সুযোগ। কারণ, ন্যায়বিচার কোনো দান নয়— এটি অধিকার। এবং এই অধিকার আদায়ের লড়াই একদিন ইতিহাসের পাঠ্য হবে— যেখানে লেখা থাকবে, “তারা আলো দেখেনি, কিন্তু আলোর পথ বানিয়েছিল সাদা ছড়ির দিক নির্দেশনায়।”
প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটদের এই আন্দোলন শুধু চাকরির দাবি নয়—এটি বাংলাদেশের শিক্ষা ও মানবাধিকারের বিবর্তনের এক নতুন অধ্যায়। সহানুভূতি নয়, তারা চান সম্মান। করুণা নয়, তারা চান সুযোগ। কারণ, ন্যায়বিচার কোনো দান নয়—এটি অধিকার। এবং এই অধিকার আদায়ের লড়াই একদিন ইতিহাসের পাঠ্য হবে—যেখানে লেখা থাকবে, “তারা আলো দেখেনি, কিন্তু আলোর পথ বানিয়েছিল সাদা ছড়ির দিক নির্দেশনায়।” এই অধিকারের বিষয়ে অনুষ্ঠিত ১২ নভেম্বরের বৈঠক তাই শুধু একটি প্রশাসনিক বৈঠক নয়—এটি বাংলাদেশের মানবিক বিবেকের আয়না। এক পাশে ন্যায়ের দাবি, অন্য পাশে নীতির দেয়াল। এক পাশে ব্রেইলের অক্ষরে লেখা স্বপ্ন, অন্য পাশে রাষ্ট্রের নথিতে লেখা বিলম্ব। কিন্তু ইতিহাস জানে—যারা চোখে দেখে না, তারাই কখনও কখনও ভবিষ্যৎ দেখতে পায় সবচেয়ে স্পষ্টভাবে।
বি:দ্র: এই প্রতিবেদনটি রাজনীতির নয়, মানবতার কাহিনি। এটি তাদের গল্প, যাদের চোখে আলো নেই, কিন্তু যাদের সাহস আছে আলো হয়ে ওঠার।
- ড. মাহবুব লিটু, অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান, বিশেষ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং উপদেষ্টা সম্পাদক, আমাদের অধিকারপত্র (odhikarpatranews@gmail.com)
#প্রতিবন্ধীঅধিকার #DisabilityRights #AccessibleBangladesh #প্রবেশগম্যতা #InclusiveEducation #DisabilityInBangladesh #Tokenism #CRPD #BangladeshDisabilityMovement #করুণা_নয়_অধিকার #LeaveNoOneBehind #DrMahbubLitu #দৃষ্টি_প্রতিবন্ধী #সাদা_ছড়ি #ব্রেইল_শিক্ষা #InclusiveSociety #HumanRights #SDG #DisabilityRightsBD #অধিকারপত্র_ডটকম #BangladeshNews