অধিকারপত্র ডটকম
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৫ ডিসেম্বর ২০২৫,
ঢাকা: ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের দেওয়া বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে এর ব্যাখ্যা দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।
আজ সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াত আমির এই দাবি জানান।
শফিকুর রহমান বলেন, ‘তাঁর (ওসমান হাদি) ওপরে এই বেদনাদায়ক কাপুরুষোচিত আক্রমণের কারণে আজকে গোটা দেশবাসী যাদের মনে সামান্য মানবিক মূল্যবোধ আছে, সবাই দারুণভাবে ব্যথিত। তারা সকলে সমবেদনা জ্ঞাপন করছে। এমনই প্রেক্ষাপটে আজকে অত্যন্ত দায়িত্বশীল একটি জায়গায় থেকে, বর্তমানে কার্যত বাংলাদেশ এই কয়টা দিন যাদের নিয়ন্ত্রণে চলবে, সেই নির্বাচন কমিশনের প্রধান, তিনি একটি বক্তব্য রেখেছেন, যা আমি বিশ্বাস করি আমার মতো সমস্ত মানুষকে আহত করেছে।’
সিইসির বক্তব্য জাতি মোটেই ভালোভাবে গ্রহণ করেনি মন্তব্য করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমি তাঁকে বিনয়ের সাথে অনুরোধ করব, আপনার এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা আপনাকে দিতে হবে। জাতির মনে আপনি বক্তব্যে যে দুঃখ সৃষ্টি করেছেন, এই দুঃখ দূর করার দায়িত্ব আপনার।’ তিনি আরও বলেন, সিইসিকে প্রমাণ করতে হবে, তিনি যে স্পর্শকাতর পদে আছেন, সেই দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি উপযুক্ত ব্যক্তি।
শফিকুর রহমান দেরি না করে সিইসিকে তাঁর বক্তব্য জাতির সামনে স্পষ্ট করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এর ফলে জাতি যদি তাঁর ব্যাপারে কোনো দুঃখ পেয়ে থাকে, তা হয়তো দূর হবে, না হলে জাতি সিদ্ধান্ত নেবে।
জামায়াত আমির সিইসি এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা সকলের কাছে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ পরিহার করে দায়িত্বপূর্ণ আচরণ প্রত্যাশা করেন।
ওসমান হাদিকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতের আমির তাঁর জীবন নিয়ে গভীর শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, আজ তাঁকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ যেন তাঁকে দ্রুত বিপ্লবী হিসেবে মানুষের মাঝে ফিরিয়ে দেন, সেই কামনা করেন।
ওসমান হাদির চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ায় জামায়াত আমির অন্তর্বর্তী সরকারকে সাধুবাদ জানান। তবে তরুণ বিপ্লবীরা আহত বা মৃত্যুর দিকে চলে গেলে তারপর সরকার নড়েচড়ে বসবে—এমনটি তিনি চান না। কেউ যাতে এমন ঘটনা ঘটানোর দুঃসাহস না দেখাতে পারে, সে জন্য সরকারকে তার দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে তিনি জোর দেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে অনেকের পদত্যাগের ব্যাপারে দাবি উঠেছে। আমরা তাদের অনুরোধ করব, আপনারা পদত্যাগ নয় বরং দায়িত্ব পালনের যোগ্য, এটাও আপনারা প্রমাণ করুন। যদি করতে ব্যর্থ হন, মনে রাখবেন, ৫ আগস্ট বারবার ফিরে আসবে। কিন্তু এটা আমাদের কামনা নয়।’
তরুণদের আত্মত্যাগের কারণে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে, তাই তরুণদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার কথা বলেন জামায়াতের আমির। তাঁর মতে, এ কারণেই তরুণ ও বিপ্লবীদেরকে নিশানা (টার্গেট) করা হচ্ছে।
শফিকুর রহমান দুষ্কৃতকারীদের সতর্ক করে বলেন, ‘এভাবে কাপুরুষোচিত হামলা করে দু–একজন মানুষকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে দেওয়ার যে ষড়যন্ত্র তোমরা করছ জাতিকে ভয় দেখানোর, তোমাদের প্রতিটি বুলেটের আঘাত এই জাতিকে নতুন করে জীবন দেবে। ইনশা আল্লাহ। অতএব সাবধান, যদি ভালো হয়ে যাও ভালো, যদি ভালো না হও তাহলে এই জাতি তার প্রয়োজনীয় পাওনা সকলের কাছ থেকে আদায় করে ছাড়বে।’
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম ও রফিকুল ইসলাম খান।
সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল।
শফিকুর রহমান সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন ওসমান হাদি গুলি জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য ঢাকা প্রেসক্লাব রাজনৈতিক সমালোচনা।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: