ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২
তারপরেও কেন বহে কালবৈশাখী ঝড়?

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানিকে বাংলাদেশি ‘জীবন’-এর সমর্থন

odhikarpatra | প্রকাশিত: ১৩ আগস্ট ২০২৫ ২১:১২

odhikarpatra
প্রকাশিত: ১৩ আগস্ট ২০২৫ ২১:১২

 -নিউইয়র্ক প্রতিনিধি

নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারি নির্বাচনে বিজয়ী মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটি ব্যাপক সমর্থন জানিয়েছেন।বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বিক্রমপুর হতে নিউইয়র্ক-এ অভিবাসী স্নিগ্ধ সম্প্রতি অধিকারপত্রকে জানান, “আসলে জোহরান মামদানি টিএনজদের ক্রেজে পরিণত হয়েছেন। আমার বিশ্ববিদ্যালয় হলের আরো কয়েক বান্ধবীসহ আমরা তার জন্য প্রাইমারীতে প্রচারণা করেছি।” সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশিদের মাঝে সমর্থন প্রদানের হার বেড়েছে, যেমন অতিসম্প্রতি জোহরান মামদানি’র উপস্থিতিতে সমর্থন জানিয়েছে “জীবন” – জ্যামাইকা ইন্টিগ্রেটেড বাংলাদেশি অফিসার্স নেটওয়ার্ক

গত শনিবার (৯ আগস্ট ২০২৫) দুপুর ২টায় কুইন্সের সিরাজী ব্যাংকুয়েট হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই এন্ডোর্সমেন্ট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডিটেকটিভ রাসেক মালিক। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ক্যাপ্টেন কারাম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি পুলিশ অফিসার মো. হালিম এবং নির্বাহী বোর্ডের সদস্য পুলিশ অফিসার ও সাংবাদিক সর্দার আল মামুন

জোহরান মামদানি তাঁর বক্তব্যে “জীবন”-এর সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশের কমিউনিটির প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করে ভবিষ্যতে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। এই অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন “জীবন”-এর কর্মকর্তা, কমিউনিটি নেতৃবৃন্দসহ অতিথিরা। মধ্যাহ্ন ভোজের মাধ্যমে এই সভার সমাপ্তি ঘোষিত হয়্।

এই ইভেন্টের ধর্মীয় ও সামাজিক তাৎপর্য রয়েছে।অনুষ্ঠানের শুরুতে ইমাম ছামশি আলী দোয়া পরিচালনা করেন। “জীবন”-এর এই সমর্থন শুধু একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নয়, বরং প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটিতে জোহরান মামদানির গ্রহণযোগ্যতারও প্রতিফলন। তবে অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে বিতর্ক ও ধনীদের সম্ভাব্য স্থানান্তর প্রসঙ্গ নির্বাচনী মাঠে তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এইরূপ ক্রমবর্ধমান সমর্থনের পাশাপাশি বিরোধী শিবিরে জোহরান মামদানি’র অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে চলছে সমালোচনা।দরিদ্র ও ইমগ্রেন্টদের অধিকারে সোচ্চার মামদানি’র অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে ধনীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া। এ প্রসঙ্গে মুন্সিগঞ্জ জেলার দেওভোগ গ্রামের বাসিন্দা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্বববিদ্র্তযালয়ের সাবেক ছাত্র নেতা ইউএস সিটিজেন জনাব মোস্তফা অধিকারপত্রকে জানান, “৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানির জনপ্রিয়তা বাড়লেও তাঁর প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক নীতিমালা নিউইয়র্কের ধনী মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তিনি নির্বাচিত হলে এক মিলিয়ন ডলারের বেশি আয়কারীদের ওপর অতিরিক্ত ২% কর আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, একইসঙ্গে কম আয়ের মানুষের জন্য সরকারি আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।” এই নীতি কেমন মনে করেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি আরো জানান, “এই নতি আমাদের মতো ইমগ্রেন্টদের সুরক্ষা দিবে”। অপরদিকে একজন বাংলাদেশি নারী ইমিগ্রেন্ট জনাব নাসরিন আক্তার শিমু জানান, “মামদানির এই নীতির বিরুদ্ধে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা যেন, ঐ যে বিক্রমপুরের একটি কথা আছে, না খেয়ে লেগে পড়া, ঠিক তেমনি হচ্ছে।” তাঁর কথার সত্যতা মিলে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রকাশিত—যেমন ফরচুন, সিএনবিসি, ফক্স বিজনেস, নিউইয়র্ক টাইমস, ও নিউইয়র্ক পোস্ট—এই নীতিকে ঘিরে সমালোচনামূলক প্রতিবেদন। আসলে যা সমাজের বৃত্তবানদেরই প্রতিনিধিত্ব করছে। জনাব নাসরিন আক্তার শিমু আরো জানান, “অনেক ব্যবসায়ী মনে করছেন, করনীতি কঠোর হলে ধনীরা শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে পারেন, বিশেষ করে ফ্লোরিডায়। এতে ট্যাক্সো বাড়তে পারে।”

সম্প্রতি সিএনএনের নিউজে প্রকাশিত ‘ট্যাক্সোডাস’ সম্পর্কে জানতে অধিকারপত্র মুখোমুখি হয়েছিল নিউইয়র্কের সরকারি কর্মকর্তা হতে আয়কর পরামর্শক হিসেবে নিউইয়র্কে আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠা ফরিদপুরের কৃতি সন্তান বি,কে,বি ডি,গ্রি কলেজের সাবেক শিক্ষক জনাব আব্দুর রশীদের সাথে। তাঁর মতে এই শব্দটি মামদানীর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ হিসেবে জনপ্রিয় হয়েছে। জনাব রশীদ বলেন, “এই ট্যাক্সোডাস খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি বিষয় হতে পারে। এর আসল প্রভাব কি হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। সবটাই অনুমান। আসলে এই ট্যাক্সোডাস শব্দটি একটি ইংরেজি শব্দ taxodus এর বাংলা ভাষান্তর। সাধারণত, এটি tax exodus এর সংক্ষিপ্ত রূপ, যার অর্থ কর প্রস্থান বা করদাতাদের শহর বা দেশ ত্যাগ করা।”

প্রকৃতপক্ষেই আধুনিক অর্থশাস্ত্র এই শব্দটি দিয়ে এমন একটি পরিস্থিতি বোঝায় যেখানে উচ্চ করের কারণে ব্যক্তি বা ব্যবসা অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়। অপরদিকে শব্দতত্ত্ব অনুযায়ী Taxodus শব্দটি সাধারণত এমন একটি পরিস্থিতি বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয় যেখানে উচ্চ করের কারণে ব্যক্তি বা ব্যবসা অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়। এই শব্দটি tax (কর) এবং exodus (গণ প্রস্থান) শব্দ দুটি থেকে এসেছে। 

এদিকে জনাব আা:রশীদের স্ত্রী নিউইয়র্কের ইসলামী শিক্ষা প্রচারে একটি মহিলা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মিসেস লাভলী গোড়াপী এই ‘ট্যাক্সোডাস’ সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, “বিলাসবহুল আবাসন ব্যবসায় অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।আপনারা হয়তো জানেন, বাজার বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান রেডফিনের তথ্য অনুযায়ী, প্রাইমারিতে মামদানির জয়ের পর আবাসন লেনদেন কিছুটা কমেছে। ফ্লোরিডার রিয়েলটরদের দাবি, নিউইয়র্ক থেকে তাদের ওয়েবসাইট ভিজিট ৫০% বেড়েছে। আমাদের বুজতে হবে ট্যাক্সোডাস কি?”। আমাদের অধিকার পত্র  ডটকম তখন তাঁকে বিষয়টি পরিস্কার করতে  মুচকি হেসে বলেন, “এটা হলো এমন এক করের ব্যবস্থা যার ভয়ে ধনীরা ট্যাক্স (প্রদান না করার জন্য)ব্যাপক স্থানান্তর ঘটায় থাকেন।” অপরদিকে মুন্সিগঞ্জের একজন প্রবাসী জনাব তিতাস জানান, “জোহরান মামদানির বক্তব্য আমেরিকার মতো পুঁজিবাদী দেশে কমিউনিজম বিতর্ককে উসকে দিয়েছে।”

মামদানীর সাথে বাংলাদেশী জীবন নেতৃবৃন্দ

মামদানীর বিষয়ে বিতর্ক সম্পর্কে জানতে অধিকারপত্র মুখোমুখি হয় মুন্সিগঞ্জ সদরের প্রবাসী উদীয়মান ব্যবস্যায়ী অলামিন ভূইয়া অরুনের। তিনি বলেন “সম্প্রতি তিঁনি (মামদানী) এক বক্তব্যে বলেছেন, সমাজে বিলিয়নিয়ার শ্রেণি থাকা উচিত নয়। আর এই নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক শুরু হয়েছে।”

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন নিয়ে নিউইয়র্কের বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ভিপি ইকবাল জানান, “নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনের যত দিন ঘনিয়ে আসছে, ততই মামদানীর প্রতি যেমন গণ সমর্থন বাড়ছে, বিশেষ করে জেন-জি’দের উন্মাদনা দেখার মতো। অপরদিকে পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর বিরোধিতাও চোখে পড়ছে।” ভিপি মহোদয়ের বক্তব্যের প্রমান মিলে নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন বৈশ্বিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত নিউজ পর্যালোচনার মাধ্যমে। এতে দুইটি স্পষ্ট বিষয় দেখা যায়: আপামোর জনসাধারণের অধিকার বনাম এলিটিজম।

বিষয়টিকে বিশ্ব রাজনীতিতে আরো গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে, যখন থেকে এই মামদানী বিরোধিতায় যুক্ত হয়েছেন স্বয়ং ইউএস মাইটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি অভিযোগ মামদানীকে শতভাগ কমিউনিস্ট হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। রিপাবলিকান নেতাদের পাশাপাশি ডেমোক্রেটিক পার্টির কিছু শীর্ষ নেতাও (যেমন সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ও বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস) তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

তবে একাডেমিক স্তরে তিঁনি সমর্থন পাচ্ছেন। যেমন: স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিসিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের অধ্যাপকগণ মনে করেন, জোহরান কমিউনিস্ট নন; বরং তাঁর প্রস্তাবগুলো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে দরিদ্রবান্ধব নীতির প্রতিফলন। সমাজের নিপীড়িতের পক্ষে অবস্থান।

বিষয়টি নিয়ে নিইওয়র্কে আরো বাংলাদেশিদের সাথে করে আলোচনা করা হয়। উদ্দেশ্য স্বদেশী আমেরিকানদের মনোভাব বুঝা। এ প্রসঙ্গে বাহেকুচি গ্রামের জনাব শেখ মুজিবুর রহমান জানান, “মামদানির মূলত কম আয়ের মানুষের পক্ষে অঙ্গীকারের জন্যই এতাটা জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।” এ প্রসঙ্গে মিসেস পারভিন মজিবর বলেন, “জোহরান ও তাঁর প্রচার টিম গণপরিবহন, বাড়িভাড়া ও নিত্যপণ্যের দাম কমানোর অঙ্গীকার করেছেন।” এ পর্যায়ে তাদের সন্তান এই যুগের তরুণদের প্রতিনিধি সজীব বলেন, “পরীক্ষামূলকভাবে সরকারি খরচে গ্রোসারি স্টোর পরিচালনা, সাশ্রয়ী ভাড়া নীতি, এবং বিনা পয়সায় যাতায়াত ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাবও রয়েছে তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে। বিষয়টা ধারুন না।”

-হাকিকুল ইসলাম খোকন, বাপসনিউজ

নিউওয়র্ক সিটির ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাওয়া জমজমাট এই মেয়র নির্বাচনের সর্বশেষ নিউজ জানতে ফলো করুন -

চোখ রাখুন অধিকার পত্রে

(আমাদের অধিকারপত্র ডট কম/S35/২০২৫)



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: