
ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে আফগানিস্তানে পূর্বাঞ্চল। রোববার রাতে পূর্ব আফগানিস্তানে আঘাত হানা ৬ দশমিক শূন্য মাত্রার ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় সময় রাতের এই ভূমিকম্পে বহু গ্রাম ধসে গেছে, শত শত মানুষ আহত হয়েছেন। উদ্ধারকারী দল এখনো ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মানুষদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল তুলনামূলকভাবে অগভীর, মাত্র ৮ কিলোমিটার (৬ মাইল) গভীরে। এর ফলে আঘাতের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। ভূমিকম্পের কম্পন কেবল পূর্ব আফগানিস্তান নয়, রাজধানী কাবুল থেকে শুরু করে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ পর্যন্ত, যা প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে, অনুভূত হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। বহু শহরে ভবন দুলতে থাকে, দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় এবং মানুষ খোলা জায়গায় আশ্রয় নেন।
তালেবান সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, লঘমন ও নাঙ্গারহার প্রদেশে অন্তত ৩৩০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে লঘমনে ৮০ জন এবং নাঙ্গারহারে ২৫০ জনের আঘাতের খবর পাওয়া গেছে। কুনার প্রদেশে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও বেশি বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, কুনারের একটি গ্রামে অন্তত ২০ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়েছেন।
উদ্ধারকাজ ত্বরান্বিত করতে তালেবান সরকার হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে। আহতদের নাঙ্গারহার বিমানবন্দরে এনে অ্যাম্বুলেন্সে আঞ্চলিক হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফাত জামান বলেছেন, “তিনটি গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন। হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।”যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পাহাড়ি এলাকায় উদ্ধারকারীরা এখনও আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, লঘমনে অন্তত ৮০ জন এবং নাঙ্গারহারে ২৫০ জন আহত হয়েছেন। কুনার প্রদেশে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও বেশি। কেবল একটি গ্রামেই ২০ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হওয়ার খবর দিয়েছে বিবিসি। “তিনটি গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন,” জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফাত জামান।
উদ্ধারকাজে প্রতিবন্ধকতা
যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এবং পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকাজ কঠিন হয়ে পড়েছে। তালেবান সরকার হেলিকপ্টার ও অ্যাম্বুলেন্স পাঠালেও আক্রান্ত অঞ্চলে পৌঁছাতে সময় লাগছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, অনেক আহতকে কাঁধে করে বা সাধারণ যানবাহনে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তবে দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি-সংকটের কারণে দ্রুত সাহায্য পৌঁছানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, যদি আন্তর্জাতিক সহায়তা না মেলে তবে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
ভূমিকম্পে আফগানিস্তানের অতীত:
আফগানিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। এর আগে ২০২২ সালের জুনে পূর্ব আফগানিস্তানে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রায় ১,০০০ মানুষ নিহত হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে তাখার প্রদেশে ভূমিকম্পে প্রাণহানি হয়েছিল প্রায় ৪,০০০ মানুষের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থান এমন যে, এখানে বড় ধরনের ভূমিকম্প বারবার আঘাত হানছে। কিন্তু দীর্ঘ যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক সংকটে দেশটির দুর্যোগ মোকাবিলা সক্ষমতা সীমিত।
দুর্গম এলাকায় উদ্ধারকাজ চলছে, কিন্তু ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা মানুষের আর্তনাদ থামছে না। হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আফগানিস্তান আবারও দেখল-ভূমিকম্প শুধু একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, দুর্বল অবকাঠামো ও সীমিত সক্ষমতার দেশে এটি এক অমোঘ মানবিক বিপর্যয়।
- মো. সাইদুর রহমান বাবু , স্পেশাল করোসপন্ডেন্টস, অধিকারপত্র
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: