ঢাকা | বুধবার, ৬ আগস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২

ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর সমাধানে দুটি বিশেষজ্ঞ কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে

odhikarpatra | প্রকাশিত: ৪ নভেম্বর ২০২৪ ২২:৪৫

odhikarpatra
প্রকাশিত: ৪ নভেম্বর ২০২৪ ২২:৪৫

ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে গঠিত ছয় সদস্যের দুটি পৃথক বিশেষজ্ঞ কমিটি এখন মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ও টেকসই সমাধানের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির সভাপতি মো. মাহমুদুল হাসান আজ বাসস’কে বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ কমিটি দুই সপ্তাহ আগে প্রথম বৈঠক করেছে এবং আমরা তাদের কাছ থেকে আরও কার্যকর উপায়ে ডেঙ্গু মোকাবেলায় কিছু পরামর্শ পেয়েছি। আমরা তাদের দক্ষতা ব্যবহার করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর সমাধান খুঁজতে চাই।’

তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস)-এর সাথে মশাবাহিত রোগের ওপর একটি পৃথক জরিপ পরিচালনার পাশাপাশি কীটনাশকের মানসম্মত ও নিখুঁত ডোজ ব্যবহার নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছেন।

ডিএনসিসি’র প্রশাসক মাহমুদুল বলেন, তারা ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বাস্তবায়ন শুরু করেছেন। তারা এক-দুই মাসের মধ্যে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের মতামত নেবেন এবংতা বছরব্যাপী চলবে। ডিএনসিসি এলাকায় প্রতিদিন এক হাজার কর্মীর মাধ্যমে সকালে ও বিকেলে নিয়মিতভাবে দুইবার লার্ভা উৎপাদন ও বৃদ্ধি প্রতিরোধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

ডিএনসিসির প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান ছাড়াও বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্য পাঁচ সদস্য হলেন- শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. মো. রাশেদুল ইসলাম, জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. গোলাম সারওয়ার, কীটতত্ত্ববিদ ডা. মো. রেজাউল করিম, ডিএনসিসি’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর খায়রুল আলম।

আজ বাসস-এর সাথে আলাপকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, তিন সপ্তাহ আগে তারা বিশেষজ্ঞ কমিটির সাথে প্রথম বৈঠক করেছেন এবং বিশেষজ্ঞরা তাদের কাছে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তুলে ধরবেন যাতে কার্যকর উপায়ে নগরীর ডেঙ্গুর ঝুঁকি মোকাবিলা করা যায়।

তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনাগুলো পর্যালোচনা করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করব।’ ডিএসসিসি’র আওতাধীন সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু প্রবণ এলাকা সম্পর্কে তিনি বলেন, ডেমরা ও কামরাঙ্গীরচর সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত এলাকা।

তিনি বলেন, ডিএনসিসি এলাকায় তাদের এক হাজার ৫০ জন কর্মী দ্বারা নিয়মিত মশা বিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি তাদের নেওয়া পদক্ষেপগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের হার তিন থেকে চার শতাংশ কমিয়ে আনবে।

শামসুল বলেন, ডিএনসিসি এলাকায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৮৯৩ এবং এর মধ্যে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

তিনি বলেন, ডিএসসিসি’র আওতাধীন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (আগে মিটফোর্ড হাসপাতাল), হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল এবং মুগদা হাসপাতালের মতো বড় হাসপাতালগুলোতে সারা বাংলাদেশের মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে কিন্তু এ হাসপাতালগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা সঠিক সংখ্যার চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেশি দেখানো হয়েছে।

ডিএসসিসি’র বিশেষজ্ঞ কমিটির পাঁচ সদস্য হলেন- ডিএসসিসি’র প্রশাসক (অতিরিক্ত সচিব) মো. নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফিরোজ আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শেফালী বেগম, ঢাবির মেডিকেল কীটতত্ত্ববিদ ড. তানজিন আক্তার ও ডিএনসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মিজানুর রহমান।

কমিটিগুলোকে পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন অনুসরন করে পর্যালোচনা ও সুপারিশ প্রদান করতে বলা হয়েছে। এছাড়া কমিটিগুলোকে কীটনাশকের ডোজ, কার্যকারিতার সময়কাল এবং পরবর্তী প্রভাব যাচাই করে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি বেসলাইন জরিপ করতে বলা হয়েছে।

এটি ব্যবহৃত কীটনাশকগুলির গুণমান এবং কার্যকারিতা, নিরাপদ কীটনাশক নির্বাচন, মূল্যায়ন, সংবেদনশীলতা নির্ধারণ এবং বিদ্যমান লার্ভা উৎপাদন ও বৃদ্ধি প্রতিরোধে ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলোর প্রয়োগের নির্ভুলতা ও প্রযোজ্যতার মূল্যায়নের পরে সেই অনুযায়ী পরামর্শ প্রদান করবে।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর এলজিআরডি ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের সঙ্গে বৈঠকের পর ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদার করতে বিশেষ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সরকার ডিএনসিসি ও ডিএসসিসিতে দুটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিবৃতি অনুসারে, এবছর ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৪৭১ জন এবং ডেঙ্গু রোগে মারা গেছে ৩১৪ জন। গত বছর, দেশে এই সময়কালে মোট ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন মানুষ সংক্রমিত হয়েছিল যার মধ্যে ১ হাজার ৭০৫ জন ডেঙ্গুজনিত রোগে মৃত্যুবরন করেন।

সুত্র : বাসস



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: