odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং (Intermittent Fasting) : সুফল না ঝুঁকি?

odhikarpatra | প্রকাশিত: ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:০২

odhikarpatra
প্রকাশিত: ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:০২

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং (Intermittent Fasting) অন্তর্বর্তী উপবাস অথবা সময়ভিত্তিক উপবাস এখন স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের জীবনে এক আলোচিত খাদ্যাভ্যাস। সীমিত সময়ে আহার পদ্ধতি বা খাওয়ার ঘড়ি-নির্ভর এই নিয়মে অনেকে ওজন কমাতে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে চেষ্টা করছেন। কেউ দিনে মাত্র আট ঘণ্টার মধ্যে খাবার খাচ্ছেন, বাকিটা সময় উপবাসে থাকছেন। আবার কেউ কেউ সপ্তাহে দু’দিন কম ক্যালোরি গ্রহণ করছেন। কেউ বলছেন এটি শরীরের জৈবিক ঘড়ি “হ্যাক” করার সহজ উপায়, আবার কেউ দেখছেন ওজন কমানোর এক চমকপ্রদ সূত্র হিসেবে। টেক উদ্যোক্তারা, হলিউড তারকারা এমনকি যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও প্রকাশ্যে জানিয়েছেন যে সপ্তাহের শুরুতে তিনি দীর্ঘ উপবাসে থাকেন। এই সব কারণেই সময় নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস দিন দিন তরুণ থেকে শুরু করে মধ্যবয়সীদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

জনপ্রিয়তা ও প্রতিশ্রুতি

অন্তর্বর্তী উপবাস মূলত দিনের খাবারকে একটি সীমিত সময়ের মধ্যে গুটিয়ে আনার নিয়ম। প্রচলিত ধরন হলো দিনে ৮ ঘণ্টা খাওয়া, আর বাকি ১৬ ঘণ্টা না খাওয়া। আবার কেউ কেউ সপ্তাহে দু’দিন ক্যালোরি কমিয়ে খাওয়ার নিয়মও মানেন। ক্যালোরি গোনার ঝক্কি নেই, কার্বস কমানোর চাপও নেই। এই সরল সমীকরণই একে এত জনপ্রিয় করেছে।

আগের গবেষণা কী বলেছিল-

বিগত গবেষণাগুলো বলছে, দীর্ঘ রাতের উপবাস শরীরের বিপাকীয় কার্যক্রম উন্নত করতে পারে, কোষের মেরামত ত্বরান্বিত করে এবং দীর্ঘায়ুতে সহায়ক হতে পারে। তবে পুষ্টিবিদেরা বরাবরই সতর্ক করেছেন—খাবারের সময় কমানো কোনো জাদুকাঠি নয়, বিশেষ করে যাঁদের আগে থেকেই ডায়াবেটিস বা হৃদ্‌রোগ আছে।

নতুন গবেষণার সতর্ক সংকেত-

১৯ হাজারেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ককে নিয়ে করা এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে ৮ ঘণ্টার কম সময়ে খাবার গ্রহণ করেছেন, তাঁদের হৃদ্‌রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় ১৩৫ শতাংশ বেশি। কিন্তু সামগ্রিক মৃত্যুহার (যেকোনো কারণে মৃত্যু) ততটা স্পষ্ট বা ধারাবাহিকভাবে বাড়েনি। অর্থাৎ হৃদ্‌স্বাস্থ্যের ঝুঁকি এখানে বেশি প্রকট হয়ে উঠেছে। গবেষকরা অবশ্য বলছেন, এটি সরাসরি কারণ-প্রভাব সম্পর্ক প্রমাণ করে না। তবে তথ্যটি এতটাই শক্তিশালী যে জনপ্রিয় ধারণা—অন্তর্বর্তী উপবাস একেবারেই ঝুঁকিমুক্ত—তা নতুন করে ভাবনার দাবি রাখে।

কারা বেশি ঝুঁকিতে-

গবেষণা বলছে, ধূমপায়ী, ডায়াবেটিস রোগী এবং যাঁদের আগেই হৃদ্‌রোগ রয়েছে, তাঁদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। গবেষকরা এমনকি খাদ্যাভ্যাসের গুণগত মান, স্ন্যাকস খাওয়ার ফ্রিকোয়েন্সি ও জীবনযাত্রা বিবেচনা করেও দেখেছেন, ফলাফল প্রায় একই রকম ছিল।

বিশেষজ্ঞদের দ্বিমত -

চীনের সাংহাই জিয়াও টং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক ভিক্টর ঝং বলেছেন: অল্প সময়ের গবেষণায় দেখা গেছে অন্তর্বর্তী উপবাস হৃদ্‌স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি অনুসরণে এটি উল্টো ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই এখনই চিকিৎসকদের সতর্ক থাকা জরুরি।অন্যদিকে ভারতীয় এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট অনুপ মিশ্রা বলেন, এটি ওজন কমাতে, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। তবে ঝুঁকিও কম নয়পুষ্টির ঘাটতি, অতিরিক্ত ক্ষুধা, মাথাব্যথা, বিরক্তিভাব, এমনকি মাংসপেশি ক্ষয়ের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।

আগের অভিজ্ঞতা

এর আগেও গবেষণা বিতর্ক তুলেছে। ২০২০ সালে JAMA Internal Medicine–এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, তিন মাসের অন্তর্বর্তী উপবাসে অংশগ্রহণকারীরা অল্প পরিমাণ ওজন কমিয়েছিলেন, যার বড় অংশই ছিল মাংসপেশি। আবার অনেকে দুর্বলতা, মাথাব্যথা ও মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা অনুভব করেছিলেন।

কী করণীয়?

বর্তমান গবেষণা বলছে, অন্তর্বর্তী উপবাসকে সবার জন্য একইভাবে কার্যকর বা নিরাপদ ধরা যাবে না। বিশেষত হৃদ্‌রোগী, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ও বয়স্কদের জন্য এ পদ্ধতি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। গবেষকরা জোর দিয়ে বলছেন—এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি অন্তর্বর্তী উপবাস শুরু করা উচিত নয়।

অর্থাৎ, সময়ের চেয়ে খাবারের গুণমান ও ভারসাম্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই স্বাস্থ্যরক্ষায় এখনই ঘড়ির দিকে নয়, বরং প্লেটের দিকে নজর দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

মো. সাইদুর রহমান বাবু, স্পেশাল করোসপন্ডেন্টস, অধিকারপত্র



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: