
শুরুর সেই আদি প্রভাতে—য
খন পৃথিবী ছিল সদ্য জাগ্রত,
যখন মানুষের চোখে ছিল বিস্ময়ের স্বপ্ন,
তখনই জন্ম নিল এক চিরন্তন প্রশ্ন—
শান্তি কোথায়?
ইডেনের বাগানে, সোনালি যুগের আলোয়,
মানুষের মনে ছিল শুধু নির্ভাবনা আর বিশ্বাস।
কোনো সংঘাত ছিল না, ছিল না দ্বন্দ্ব,
ছিল শুধু সহাবস্থানের এক নির্মল সংগীত।
কিন্তু নিষিদ্ধ ফলের স্বাদে ভেঙে গেল সেই নীরবতা,
মানুষ আবিষ্কার করল ভেতরের অশান্তিকে।
কাইন যখন হাবিলের রক্ত মাটিতে ঝরাল,
সেই মুহূর্তেই শুরু হলো মানুষের অন্তহীন যুদ্ধযাত্রা।
প্যান্ডোরার বাক্স থেকে উড়ে বেরোল দুঃখ, ক্লান্তি, রোগ আর ভয়—
শান্তি যেন সরে গেল চোখের আড়ালে,
মানুষকে ছুঁয়ে গেল কেবল তার ক্ষণিক স্মৃতি।
তবুও মানুষ হার মানেনি।
বুদ্ধ বললেন—
“লোভ ও ক্রোধকে যদি তুমি শূন্য করো,
তবে অন্তরের নীরবতায় খুঁজে পাবে শান্তির ফুল।”
উপনিষদের ঋষি উচ্চারণ করলেন—
“সর্বজন হিতায়, সর্বজন সুখায়।”
দাওবাদ শেখাল—
নদীর মতো প্রবাহিত হও,
প্রকৃতির ছন্দেই শান্তি।
আর ইসলামের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হলো—
“সালাম”—যেখানে নিরাপত্তা, ন্যায় আর সমৃদ্ধির মিলিত সুর।
মানুষ বারবার শিখল—
শান্তি মানে শুধু যুদ্ধের অনুপস্থিতি নয়,
বরং ন্যায়ের উপস্থিতি।
আফ্রিকার মাটিতে, দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসী লোককথায়,
বারবার শোনা গেল সেই একই সুর—
শান্তি হলো মানুষের, প্রকৃতির, আর সৃষ্টির মিলনবন্ধন।
আজও যুদ্ধের আগুনে জ্বলে ওঠে পৃথিবী,
আজও অশ্রুর স্রোতে ভিজে যায় মানবতার মুখ।
কিন্তু তবুও কোথাও না কোথাও,
একটি শিশু কাগজের পায়রা উড়িয়ে দেয় আকাশে,
একজন মাতা শান্তির প্রার্থনা ফিসফিস করে,
একজন কবি লিখে চলে স্বপ্নের গান।
মানুষ তাই থামে না।
সে খুঁজে চলে,
অদৃশ্য কিন্তু চিরন্তন সেই আলোর পথ—
যেখানে শান্তি একদিন হবে সকলের,
যেখানে যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপের ভেতরও
উদিত হবে শান্তির শ্বেতপদ্ম।
বি.দ্র. এই কাব্যিক সম্পাদকীয়-এর সাহিত্যধর্মী প্রকাশের সাথে পরিচিত হতে পড়ুন “শান্তির খোঁজে মানবতার অনন্ত যাত্রা” লিংক: https://www.odhikarpatra.com/news/31644
— লেখক: ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান (লিটু), অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং উপদেষ্টা সম্পাদক, আমাদের অধিকা্রপত্র, odhikarpatranews@gmail.com
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: